Monday , May 20 2024
Breaking News

রোযার গুরুত্ব ও ফযীলত | Importance and benefits of fasting

রোযার গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না । তাই আজ আমরা আলোচনা করব রোযার গুরুত্ব ও ফযীলত | Importance and benefits of fasting

রোযার গুরুত্ব ও ফযীলত | Importance and benefits of fasting

ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রমজান মাসের রোজা অত্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ । দ্বিতীয় হিজরিতে কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা উম্মতের উপর রোজা ফরজ করেছেন।
রমজানের রোজা কেউ যদি অস্বীকার করলে— সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এছাড়াও শরিয়ত সমর্থিত ওজর (অপারগতা) ছাড়া ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গকারী— মৌলিক ফরজ লংঘনকারী ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারীরূপে গণ্য।

আলোচ্য বিষয়ঃ

  • রোজা বা সিয়াম কি?
  • রমজান মাসের গুরুত্ব
  • বরকতময় মাস রমজান
  • রোজা বা সাওম এর ফজিলত
  • রোজা বা সাওম পালনকারীদের পুরস্কার

রোজা বা সিয়াম কি?

আরবি মাসগুলোর নবম মাস হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। রোজা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। রোজা শব্দটি ফারসি। এর আরবি পরিভাষা হচ্ছে সওম, বহুবচনে বলা হয় সিয়াম। সওম অর্থ বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা। ইসলামি পরিভাষায় সওম হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্যেশে কোন কিছু পানাহার থেকে বিরত থাকাকে রোজা বা সিয়াম বলে।

নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওজর বা অসুস্থতা ছাড়া রমজানের একটি রোজা পরিত্যাগ করবে— সে যদি ওই রোজার পরিবর্তে আজীবন রোজা রাখে তবু ওই এক রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭২৩)রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রমজান) পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য সময় সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

রমজান মাসের গুরুত্বঃ

রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৬৮)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

ব্যবসায় সফলতা অর্জনের কৌশল|ব্যবসায় সফল হওয়ার ১০টি কৌশল।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে— হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)

বরকতময় মাস রমজানঃ

রমজান বরকতময় মাস আবু হুরায়রা (রা) বলেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটল, তখন নবীজি (সা.) ইরশাদ করলেন, ‘তোমাদের কাছে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন…।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭১৪৮)

রমজানের রোজা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার রোজার বিনিময়ে অনেক বড় পুরস্কারেরও ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, “আল্লাহ্ তাআলা বলেন- ‘রোজা আমারই জন্য। আমি নিজে এর প্রতিদান দেব। আমার বান্দা আমার জন্য পানাহার ছেড়ে দেয়, কামনা-বাসনা ছেড়ে দেয়। রোজাদারের জন্য দু’টি খুশি। একটি খুশি ইফতারের সময়। আরেকটি খুশি আমার সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময়। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধের চেয়েও উত্তম।” (বুখারি, হাদিস : ৭৪৯২)

এ মাসে মানুষের প্রত্যেকটি আমল বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। একটি নেকি ১০ গুণ থেকে (ক্ষেত্র বিশেষে) ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোজার ব্যাপারটি ভিন্ন। কারণ, রোজা আমার জন্য। সুতরাং তার প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করব।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৪)

রোজা বা সাওম এর ফজিলত

রমজান মাসের অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। এ ফজিলতের মধ্যে রয়েছে-আল্লাহ তাআলা রোজাদারদের জন্য ‘রাইয়্যান’ নামক জান্নাতের দরজা প্রস্তুত রেখেছেন। বুখারি ও মুসলিমে সাহল (রাঃ) কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসে নামটি এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “জান্নাতের একটি দরজা আছে; যার নাম হচ্ছে- ‘রাইয়্যান’কেয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে শুধু রোজাদারগণ প্রবেশ করবে; অন্য কেউ নয়। এই বলে ডাকা হবে- রোজাদারগণ কোথায়? তখন রোজাদারগণ উঠে প্রবেশ করবে; অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। তারা প্রবেশ করার পর সে দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।” [সহিহ বুখারি (১৭৬৩) ও সহিহ মুসলিম (১৯৪৭)]

আর যে ব্যক্তি সে রাইয়ান গেট দিয়ে প্রবেশ করবে সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।

নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিস | IMPORTANCE OF SALAH

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রমজান মাস লাভকারী ব্যক্তি, যিনি উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম পালন করে, তার প্রথম পুরস্কার— রমজান শেষে গুনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয়— যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৮৯৬৬)

রোজা বা সাওম পালনকারীদের পুরস্কার

আবু সালামা (রাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা”আলা বলেন রোজা আমার জন্য; আমিই এর প্রতিদান দিব। রোজা হচ্ছে- ঢালস্বরূপ। যেদিন তোমাদের কেউ রোজা রাখে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে, চেঁচামেচি না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় সে যেন বলে, আমি রোজাদার। ঐ সত্তার শপথ যার হাতে রয়েছে মুহাম্মদের প্রাণ, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের সুবাসের চেয়ে উত্তম। রোজাদারের জন্য রয়েছে দুইটি খুশি। যখন রোজা ইফতার করে তথা রোজা ভাঙ্গে তখন একবার খুশি হয়। আবার যখন তার রবের সাক্ষাত পাবে তখন একবার খুশি হবে।”[সহিহ বুখারি (১৭৭১)]

দোয়া কবুল ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি

এ মাসে অসংখ্য মানুষের দোয়া কবুল করা হয়। আবেদন মঞ্জুর করা হয়। জাহান্নামির নাম জাহান্নামের তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয়, দোখজ থেকে মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। তাই এ মাসে বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইতে হবে। যাবতীয় দরখাস্ত দয়াময় আল্লাহর দরবারে পেশ করতে হবে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রত্যেক দিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৪৫০)

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে | এনআইডি কার্ড করতে কি কি লাগে

হাদিসে আছে, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না : রোজাদারের দোয়া, ইফতার পর্যন্ত। ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। মজলুমের দোয়া।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩৪২৮)

রমজান পাপ মোচন ও গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের মাস। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলো মুছে দেয় যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

রমজানে দান-খায়রাত বেশি করা

নবী কারিম (সা.) এমনিতেই প্রচুর দান করতে। আর এ মাসে দানের পরিমাণ আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলে আকরাম (সা.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। তার দানশীলতা অধিকতর বৃদ্ধি পেত রমজান মাসে; যখন জিবরাঈল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরাঈল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তারা পরস্পর কোরআন শোনাতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল। (মুসলিম, হাদিস : ২৩০৮)

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি কাগজ লাগে | জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম ২০২৩

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোজাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজাদারের প্রতিদান থেকে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)

আল্লাহ তাআলা আমাদের রমজানে বেশি থেকে বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

প্রিয় পাঠক, রোযার গুরুত্ব ও ফযীলত | Importance and benefits of fasting সম্পর্কিত কোন পয়েন্ট উঠে না আসলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। পরবর্তিতে আমরা তা হালনাগাত করে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ। এছারা প্রতিনিয়ত সিক্ষামুলক পোস্ট পেতে আমাদের সাথাই থাকুন। যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে। ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন

রোজার ফজিলত ও গুরুত্ত | রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত | রোজার গুরুত্ব ও উপকারিতা | রমজানের রোজার গুরুত্ব | রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস | রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত আরবি | রমজান মাসের ফজিলত ও আমল


About admin

Check Also

নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিস | IMPORTANCE OF SALAH

নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিস | IMPORTANCE OF SALAH

প্রিয় পাঠক, আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা সালাত বা নামাজ সম্পর্কে ভালো জানে না। নামাজের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *